লায়লি-মজনু

কালজয়ী এবং অসাধারন এই প্রেমকাহিনীর আছে অসংখ্য সংস্করন। তবে মূল কাহিনী প্রায় সব জায়গাতেই এক। ভিন্নতা শুধু কাহিনীর উপাদানে সব সংস্করনেই নায়ক-নায়িকার মাঝে দুস্তর ফারাক এবং বেশিরভাগ কাহিনীতে নায়ক রাজপুত্র এবং নায়িকা এবং বেদুইন সর্দারের মেয়ে। আর লক্ষ করার মত বিষয়টি হচ্ছে মজনু তার মজনু নামে যুগে যুগে দুনিয়াজুড়ে আলোচিত হয়ে এলেও অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন 'মজনু' আদতে কয়েস বিন আমর নামের প্রাচীন এক আরবের বিখ্যাত কবি। লায়লির প্রেমে পরেছিলেন বলেই তার আরেক নাম মজনু (মজনু বা মজনু নামের অর্থটাও কিন্ত তাই প্রেমউন্মাদ) এমনকি নির্ভরযোগ্য বেশকিছু সংস্করনে নায়কের নাম 'কয়েস'ই রাখা হয়েছে। সংক্ষেপে লাইলি-মজনুর কাহিনী এ রকম - ছেলে কায়েসকে নিয়ে একটি সারাইখানায় আশ্রয় নিয়ছিলেন আল বাহরামের রাজ্যচুত সুলতান আমর বিন - আন্দুল্লাহ সে সময় কয়েসের মন দেওয়া নেওয়া হয় হিজ্জা সর্দার আল শাহিদির কন্যা লায়লার সঙ্গে। কয়েসের সেই কবিতাই ছিল তার প্রানপ্রিয় লায়লাকে নিয়ে সুযোগ পেলেই তার কবিতা শোনাতে ভুলতে না প্রিয়তমা লায়লাকে। লায়লার ছিল মাত্রাতিরিক্ত পশুপ্রেম। লায়লার পোষা কুকুরটির নাম ছিল ওজজা। জিন্দান নামের আদরের একটি হরিন ও ছিল লায়লার। অচিরেই কয়েস - লায়লার প্রেমের পথের কাটা হয়ে দাড়ায় বুরিদানের বাদশা নওফেল, শিকারী নওফেলের তীরবিদ্ধ হয়ে মারা যায় জিন্দান। শোকে মুহ্যমান লায়লা অভিশাপ দেয় অবিবেচক নওফেলকে। এভাবই নওফেল প্রথম দেখে লায়লাকে এবঙ্গ মারিয়া হয়ে উঠে অসামান্য রুপসী লায়লাকে পাওয়ার জন্য। শাহজাদা কয়েস আর লায়লার বিয়ের সব আয়োজন যখন সু-সম্পন্ন, দরবার কক্ষে যখন বসেছে সাদির মাহফিল। তখন কোথা থেকে ছোটে আসে লায়লির প্রিয় কুকুর ওজজা। প্রেয়সি লায়লার জন্য ব্যকুল কয়েস বাহ্যজ্ঞান হারিয়ে ''এই মুখে তুই লাইলির পদচুম্বন করেছিস''- এই বলে চুমু খেয়ে বসে ওজ্জার মুখে। সংঙ্গে সঙ্গে চারদিক ছিঃ ছিঃ পরে যায়। এ যে বদ্ধ পাগল । বাদশা স্বয়ং।শাদির মাহফিল থেকে ফিরতি পথ ধরে অপমানিত কয়েস। উপায় না দেখে সওদাগর আল মাহিদ রাজি হয়ে যান কু-চক্রি নওফেলের সঙ্গে লায়লির বিয়ে দিতে। এদিকে ভগ্নহৃদয় কয়েস নিরুদ্দেশ হয়ে যায় মরুভূমিতে। ফুল শয্যার দিনে অবিশ্বাস্যভাবে ফলে যায় লায়লির দেওয়া অভিশাপ। নিজের হাতে পান করা শরবতের বিষক্রিয়ায় মারা যায় নওফেল। কুকুর ওজ্জাকে নিয়ে অন্ধকার রাতে পালিয়ে যায় লায়লা। প্রিয়তম কয়েসের ডাক ভেবে মরীচিকার পেছনে হন্য হয়ে ছুটতে থাকে সে। রাতে মরুভূমির লু-হাওয়া মরুঝড় সাইমুমে রুপ ন্য়ে। পরদিন পথ চলতি কাফেলা বালির স্তুপের নিচে আবিস্কার করে লায়লা, কয়েস আর কুকুর ওজজার লাশ।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ