শিরি-ফরহাদ

শিরি-ফরহাদ প্রেম গাথার মূল উৎস প্রাচীন ইরানি লোকগাথা। এই কাহিনীরও আছে বেশ কিছু রকমফের। কাহিনীর নায়িকা শিরিন সব সংস্করনেই রানী বা রাজকন্যা। নায়ক ফরহাদ কোথাও বাঁধ বা জলাধার নির্মাতা, কোথাও স্থপতি, কোথাও বা ধ্বনিতাত্ত্বিকদের বিচারে ফরহাদ বা ফহাদ শব্দটি 'বৃত্ত' বা বাধের কাছাকাছি। এই প্রেম কাহিনীর প্রাচীনতম একটি সংস্কারে দেখা যায় শিরিন শব্দের অর্থ সৌন্দর্য। নায়িকা শিরি-ফরহাদকে বলেছিলেন ওই নদীতে বাঁধ- বাধতে পারলে আমাকে পাবে। নায়ক ফরহাদ হূদয়বানীকে জয় করার আশায় অসম্ভবকে সম্ভব করার আশায় কাজে নামে। কিন্তু দুভার্গ্যক্রমে বাধ ভেঙে যায় এবং জলের তোরে ফরহাদ ভেসে যায়। তখন শিরিও পানিতে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। আর একটি নির্ভরযোগ্য কাহিনীতে নায়ক ফরহাদকে দেখানো হয়েছে হতভাগ্য এবং খ্যতনামা ভাস্কর হিসাবে। এই কাহিনী এরকম - কোহে আরমান রাজ্যের রাজকন্যা। শিরি রূপে-গুনে তুলনাহীন। আর পশ্চিম চীন সিমান্তের ছোট জনপদ কাঁয়রোর নামজাদা এবঙ প্রতিভাধর ভাস্কর ফরহাদ। পাথর কেটে মানুষ্য মূর্তি নির্মান করে সে। ফরহাদের অহংকার ছিল তার বানানো মূর্তির চেয়ে সুন্দর দুনিয়ায় আর কিছু হতে পারে না। কিন্তু আকস্মাৎ একদিন রাজকন্যা শিরি চিত্রপট (হাতে আকা ছবি) দেখে সেই অহংকার ভেঙে খান খান হয়ে যায় তার। শিরির রূপে বিমুগ্ধ ফরহাদ। শিরির রূপে বিমোহিত হয়ে ফরহাদ মানসিকভাবে বৈলক্ষন্য দেখা দেয় তার মাঝে। প্রেমে উন্মত্ত হয়ে একের পর এক শিরির মূর্তি গড়তে থাকে সে। হয়ে যায় উদভ্রান্ত, উদ্দেশ্যহীন মুসাফির একদিন ঘুরতে ঘুরতে সত্যি সত্যি সামনাসামনি শিরির দেখা পায়। কিন্তু রাজ্য আর ক্ষমতার টানে শিরি গ্রহন করতে পারে না ফরহাদকে। এদিকে অর্ধউন্মাদ ভাস্কর ফরহাদ কুঠার হাতে লেগে যায় বেসাতুন পর্বতকে শিরির স্মৃতিরূপে গড়ে তোলার কাজে। যুদ্ধ জয় শেষে এই ঘটনা শোনার পর রাজ্য সিংহাসন তুচ্ছ করে শিরি ছুটে যায় বেসাতুন পর্বতে ফরহাদের কাছে। ভূমিকম্পে একসাথে প্রাণ হারায় দু'জন।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ