লেখাপড়া মনে রাখার টেকনিক



লেখাপড়া মনে রাখা কেবল মুখস্থ করার বিষয় নয়, বরং বিজ্ঞানসম্মত কিছু কৌশল অবলম্বন করে স্মৃতিশক্তিকে আরও কার্যকর করা সম্ভব। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ 'গোপন' বিষয় আলোচনা করা হলো:
১. বিরতি নিয়ে রিভিশন (Spaced Repetition)
জার্মান মনোবিদ হারমান এবিনঘাসের গবেষণা অনুযায়ী, আমরা কোনো কিছু পড়ার এক ঘণ্টা পর সেটির প্রায় অর্ধেক ভুলে যাই। তাই তাৎক্ষণিক রিভিশন না দিয়ে, বিরতি দিয়ে বারবার একই বিষয় পড়া উচিত। এটি "স্পেসড রিপিটেশন" নামে পরিচিত। যেমন, আজ যা পড়লেন, তার ৩০ মিনিট পর একবার, ১ দিন পর আরেকবার, ১ সপ্তাহ পর আরেকবার এবং ১ মাস পর আবার পড়ুন। এতে পড়া দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিতে রূপান্তরিত হয়।
২. ফাইনম্যান পদ্ধতি (Feynman Technique)
বিখ্যাত পদার্থবিদ রিচার্ড ফাইনম্যানের নামে এই পদ্ধতির নামকরণ করা হয়েছে। এর মূল কথা হলো: কোনো কিছু পড়ার পর তা অন্য কাউকে শেখানোর চেষ্টা করুন, যেন সে বিষয়টি সহজে বুঝতে পারে। যখন আপনি কাউকে শেখাতে যাবেন, তখন আপনাকে নিজের মতো করে বিষয়টি গুছিয়ে নিতে হবে, সরলভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে এবং আলোচনার মাধ্যমে সেটি আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। এতে আপনার স্মৃতিতে পড়াটা আরও গভীরভাবে গেঁথে যায়।
৩. পোমোডোরো পদ্ধতি (Pomodoro Technique)
এটি একটি সময় ব্যবস্থাপনা কৌশল। এই পদ্ধতিতে ২৫ মিনিট মনোযোগ দিয়ে পড়ুন, এরপর ৫ মিনিটের বিরতি নিন। এই ২৫ মিনিট মোবাইল বা অন্য কোনো কিছু থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। বিরতির সময়টায় সম্পূর্ণ বিশ্রাম নিন বা অন্য কোনো হালকা কাজ করুন। এভাবে কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করুন। এতে মনোযোগ বাড়ে এবং পড়ার কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
৪. পর্যাপ্ত ঘুম
ঘুম মস্তিষ্কের কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য। গবেষণায় দেখা গেছে, পড়াশোনার পর নির্দিষ্ট সময় ঘুমালে পড়া মনে রাখতে খুব সাহায্য করে। সারাদিনের শেখা তথ্যগুলো ঘুমের সময় মস্তিষ্কে সুসংহত হয় এবং দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিতে রূপান্তরিত হয়। তাই প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা জরুরি।
৫. বুঝে পড়া এবং নোট নেওয়া
শুধুমাত্র মুখস্থ না করে বিষয়টি ভালোভাবে বুঝে পড়া দরকার। না বুঝে মুখস্থ করলে তা দ্রুত ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যা পড়ছেন, তার সংক্ষিপ্ত নোট তৈরি করুন। এতে নিজের মতো করে মূল বিষয়গুলো সাজানো হয়, যা মনে রাখতে সাহায্য করে এবং পরবর্তীতে রিভিশন দিতে সুবিধা হয়।
৬. মেমোনিক পদ্ধতি (Mnemonic Devices)
অনেক ছোট ছোট তথ্য, যেমন তারিখ, নাম, বা তালিকা মনে রাখার জন্য ছড়া, গল্প, ছবি বা বিশেষ সংকেত ব্যবহার করুন। এটিকে মেমোনিক পদ্ধতি বলা হয়। ব্রেইন অগোছালো বিষয়ের চেয়ে কৌশল করে সাজানো বিষয়গুলো সহজে মনে রাখতে পারে।
৭. শরীরচর্চা ও মানসিক ব্যায়াম
নিয়মিত হাঁটাচলা বা হালকা শরীরচর্চা ব্রেইনকে সতেজ রাখে এবং এর কার্যক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়াও, সুডোকু, ক্রসওয়ার্ড, ধাঁধা সমাধান বা নতুন কিছু শেখার মতো মানসিক ব্যায়াম স্মৃতিশক্তি ও মনোসংযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। ধ্যান বা মেডিটেশনও মানসিক চাপ কমিয়ে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক।
৮. আগ্রহ তৈরি
কোনো কিছু শেখার আগে সেই বিষয়ে আগ্রহ তৈরি করুন। যদি আপনার আগ্রহ থাকে, তাহলে সেই বিষয়টি মনে রাখা সহজ হয়। খেলার প্রতি বা সিনেমার প্রতি যেমন আগ্রহ থাকে, তেমনই পড়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি করার চেষ্টা করুন।
এই কৌশলগুলো নিয়মিত অনুশীলন করলে আপনার লেখাপড়া মনে রাখার ক্ষমতা অনেক বেড়ে যাবে। আপনার আর কিছু জানার থাকলে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

হরি দল ও অক্ষরজ্ঞানহীন দরিদ্র কৃষক হরিপদ কাপালী

"বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল"

ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়ার চিকিৎসায় অগ্রগতি - আত্মহত্যার রোগ