জবা ফুল

বা (Hibiscus rosa-sinensis) একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং সুন্দর ফুল, যা Malvaceae গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। এটি প্রধানত পূর্ব এশিয়ার স্থানীয় হলেও বর্তমানে বিশ্বের ক্রান্তীয় ও উপ-ক্রান্তীয় অঞ্চলে ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়।
বৈশিষ্ট্য
 * সাধারণ গঠন: জবা একটি চিরহরিৎ গুল্ম বা ছোট গাছ, যা সাধারণত ২.৫ থেকে ৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। এর পাতাগুলো চকচকে এবং কাণ্ড সবুজ ও শাখাযুক্ত।
 * ফুল: জবা ফুলের পাপড়ির সংখ্যা সাধারণত পাঁচটি এবং এগুলো উজ্জ্বল লাল, গোলাপী, সাদা, হলুদ, কমলা বা বেগুনিসহ বিভিন্ন রঙের হয়। কিছু জবার প্রজাতিতে থোকা আকারেও ফুল ফোটে। এটি ঠোঙ্গা আকৃতির হয়ে থাকে।
 * ফোটার সময়: জবা মূলত গ্রীষ্ম ও শরৎকালীন ফুল হলেও সারা বছরই কমবেশি ফোটে, তবে গ্রীষ্ম-বর্ষায় এর প্রাচুর্য বেশি দেখা যায়।
 * পরিচিতি: এটি চায়না রোজ, হাওয়াইয়ান হিবিস্কাস, রোজ ম্যালো, বা শু-ব্ল্যাক প্ল্যান্ট নামেও পরিচিত। বাংলায় এটিকে রক্তজবা, জবা কুসুম, বা ঝুমকা জবাও বলা হয়।
উপকারিতা
জবা ফুল কেবল সৌন্দর্যের জন্যই নয়, এর অনেক ঔষধি গুণও রয়েছে:
 * চুলের যত্নে: জবা চুল পড়া কমাতে, নতুন চুল গজাতে, চুল ঘন ও কালো করতে, এবং খুশকি দূর করতে খুবই কার্যকর। এতে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড কেরাটিন প্রোটিনের উৎপাদন বাড়ায়, যা চুলের গোড়াকে মজবুত করে। এটি তেল, শ্যাম্পু, কন্ডিশনার বা মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
 * ত্বকের যত্নে: জবাতে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, আলফা হাইড্রোক্সিল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এটি ত্বকের কালো দাগছোপ কমাতে, উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং শুষ্ক ত্বক ও ফাটা দূর করতে সাহায্য করে। জবার পাপড়ি দিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করা যায়।
 * ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, জবা ফুল থেকে তৈরি উপাদান ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা পুনরুদ্ধার করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
 * রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে: জবা ফুল থেকে তৈরি চা (হিবিস্কাস টি) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং কোলেস্টেরল কমাতেও ভূমিকা রাখে। এটি অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণসম্পন্ন।
 * মূত্রনালীর সংক্রমণ প্রতিরোধে: জবার জীবাণুনাশক ও ছত্রাকনাশক উপাদান মূত্রনালীর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে।
 * ব্যথা কমাতে: জবা ফুল শরীরের ব্যথা কমাতেও সহায়ক হতে পারে।
 * অন্যান্য ব্যবহার: এটি মেয়েদের অনিয়মিত ঋতুচক্রের সমস্যা সমাধানেও ব্যবহৃত হয়। জ্বর ও সর্দি-কাশিতেও এটি উপকারী।
কোথায় পাওয়া যায়
জবা ফুল সাধারণত উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় ভালো জন্মায়। এটি ভারতীয় উপমহাদেশে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে (যেমন ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন) ব্যাপকভাবে দেখা যায়। বাংলাদেশেও প্রায় সব বাড়িতেই, বিশেষ করে বাড়ির আঙিনা বা ছাদে শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদ হিসেবে এর চাষ করা হয়। এটি বীজ বা ডাল কেটে সহজেই রোপণ করা যায়।
অনেক সময় জবা ফুলের গুঁড়ো বা পাউডারও বাজারে কিনতে পাওয়া যায়, যা চুল ও ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত হয়।
আপনি জবা ফুল সম্পর্কে আরও কিছু জানতে চান?

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

হরি দল ও অক্ষরজ্ঞানহীন দরিদ্র কৃষক হরিপদ কাপালী

"বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল"

ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়ার চিকিৎসায় অগ্রগতি - আত্মহত্যার রোগ