ছাদ বাগান
ছাদ বাগান বা রুফটপ গার্ডেনিং আজকাল শহুরে জীবনে এক দারুণ জনপ্রিয় ধারণা। যাদের নিজস্ব বাগান করার মতো জমি নেই, তারা নিজেদের বাড়ির ছাদকেই কাজে লাগিয়ে তৈরি করছেন সুন্দর সবুজ মরূদ্যান। আর এই ছাদ বাগানে যখন ফল আসে, তখন তার আনন্দ সত্যিই অতুলনীয়!
ছাদ বাগানে ফল আসার আনন্দ
ছাদ বাগানে ফল আসাটা কেবল ফল উৎপাদন নয়, এটি শখের বশবর্তী হয়ে করা পরিশ্রমের এক দারুণ প্রতিদান। নিজের হাতে লাগানো গাছ থেকে তাজা ফল পাড়ার অনুভূতিটাই অন্যরকম। এটি যেমন পরিবারকে স্বাস্থ্যকর ফল সরবরাহ করে, তেমনি মনকেও সতেজ রাখে। টাটকা ফলগুলো বাজার থেকে কেনা ফলের চেয়ে বেশি সুস্বাদু এবং রাসায়নিকমুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সাধারণত যে ফলগুলো ছাদ বাগানে ভালো হয়
ছাদ বাগানের জন্য এমন ফল গাছ নির্বাচন করা উচিত যেগুলো ছোট আকারের পাত্রে ভালো জন্মায় এবং খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না। কিছু জনপ্রিয় ফল গাছ হলো:
* লেবু: বিভিন্ন প্রকার লেবু গাছ, যেমন কাগজি লেবু, পাতি লেবু, বাতাবি লেবু ছাদ বাগানের জন্য খুবই উপযোগী। এগুলো সহজে যত্ন নেওয়া যায় এবং সারা বছর ফল দেয়।
* পেঁপে: অল্প জায়গাতেও পেঁপে গাছ ভালো ফলন দেয়। এর দ্রুত বৃদ্ধি এবং ফলনশীলতা ছাদ বাগানের জন্য একে আদর্শ করে তোলে।
* ডালিম: ছোট আকারের ডালিম গাছ বা হাইব্রিড জাতগুলো ছাদ বাগানে ভালো ফল দেয়।
* আম: কলম করা বা হাইব্রিড আমের চারা ছাদ বাগানে লাগানো যেতে পারে। ছোট আকারের আমের জাতগুলো পাত্রে ভালো ফলন দেয়।
* পেয়ারা: পেয়ারা গাছ ছাদ বাগানের জন্য বেশ জনপ্রিয়। নিয়মিত ছাঁটাই এবং সঠিক পরিচর্যায় ভালো ফলন পাওয়া যায়।
* কুল/বরই: দেশি বা থাই কুলের জাতগুলো ছাদ বাগানে বেশ সফল।
* স্ট্রবেরি: ছোট টবে স্ট্রবেরি চাষ খুব সহজ এবং দ্রুত ফল পাওয়া যায়।
* ড্রাগন ফল: এটি একটি ক্যাকটাস জাতীয় ফল এবং ছাদ বাগানে খুব সুন্দরভাবে চাষ করা যায়। এর জন্য একটি অবলম্বন প্রয়োজন হয়।
ছাদ বাগানে ফল গাছের পরিচর্যা
ছাদ বাগানে ফলন ভালো পেতে হলে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি:
* সঠিক পাত্র নির্বাচন: ফল গাছের জন্য পর্যাপ্ত আকারের পাত্র নির্বাচন করা উচিত, যাতে শিকড় ভালোভাবে ছড়াতে পারে। ড্রামের অর্ধেক অংশ বা বড় আকারের মাটির টব এক্ষেত্রে ভালো কাজ দেয়।
* উর্বর মাটি: গাছের বৃদ্ধির জন্য উর্বর এবং জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ মাটি প্রয়োজন। দোআঁশ মাটির সাথে প্রচুর পরিমাণে কম্পোস্ট, গোবর সার বা ভার্মিকম্পোস্ট মেশানো উচিত।
* পর্যাপ্ত সূর্যালোক: ফল গাছের জন্য দৈনিক অন্তত ৬-৮ ঘণ্টা সরাসরি সূর্যালোক প্রয়োজন। ছাদের এমন অংশ নির্বাচন করুন যেখানে পর্যাপ্ত রোদ পড়ে।
* নিয়মিত জলসেচ: ফল গাছে নিয়মিত জল দিতে হবে। গ্রীষ্মকালে প্রতিদিন জল দেওয়া জরুরি হতে পারে, তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন জল জমে না থাকে। অতিরিক্ত জল নিষ্কাশনের জন্য পাত্রে পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকতে হবে।
* সার প্রয়োগ: নিয়মিত সার প্রয়োগ ফলের গুণগত মান এবং পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। জৈব সার যেমন - সরিষার খৈল পচা জল, কম্পোস্ট, গোবর সার ব্যবহার করা যেতে পারে। রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার পরিহার করতে হবে।
* রোগ পোকা দমন: ছাদ বাগানেও বিভিন্ন রোগ পোকার আক্রমণ হতে পারে। নিম তেল বা অন্যান্য জৈব কীটনাশক ব্যবহার করে এগুলো দমন করা যেতে পারে। নিয়মিত গাছ পর্যবেক্ষণ করা জরুরি।
* ছাঁটাই: গাছের সঠিক আকার বজায় রাখতে এবং ভালো ফলন পেতে নিয়মিত ছাঁটাই (Pruning) গুরুত্বপূর্ণ। শুকনো ডালপালা এবং অনাকাঙ্ক্ষিত শাখা ছেঁটে ফেলুন।
সতর্কতা
ছাদের ওপর অতিরিক্ত গাছ লাগালে ছাদের ওপর চাপ পড়তে পারে। তাই ছাদের ভারবহন ক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে গাছ লাগানো উচিত। প্রয়োজনে স্থপতির পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
ছাদ বাগানে ফল আসাটা একদিকে যেমন পরিবেশের জন্য ভালো, তেমনি এটি মানসিক প্রশান্তিও দেয়। নিজের উৎপাদিত ফল খাওয়ার পরিতৃপ্তি সত্যিই অপার্থিব।
আপনার ছাদ বাগানে কোন ফল এসেছে এবং কীভাবে এর যত্ন নিচ্ছেন, তা জানাতে পারেন!
মন্তব্যসমূহ