বজ্রপাত


জ্রপাত হলো প্রকৃতির এক শক্তিশালী এবং আকর্ষনীয় ঘটনা। এটি মূলত মেঘ এবং ভূপৃষ্ঠের মধ্যে বৈদ্যুতিক চার্জের ভারসাম্যহীনতা থেকে তৈরি হয়। যখন মেঘের মধ্যে থাকা বরফকণা এবং জলীয় কণাগুলো যখন ঘষা খায়, তখন স্থির বিদ্যুতের সৃষ্টি হয়। এই বিদ্যুৎ মেঘের বিভিন্ন অংশে এবং মেঘ ও ভূপৃষ্ঠের মধ্যে বিভব পার্থক্য তৈরি করে। যখন এই বিভব পার্থক্য একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় পৌঁছায়, তখন একটি শক্তিশালী বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গ তৈরি হয়, যা আমরা বজ্রপাত হিসেবে দেখি। বায়ুমণ্ডলের বৈদ্যুতিক চার্জের দ্রুত নিঃসরণ, যা মেঘ এবং ভূপৃষ্ঠ বা মেঘের বিভিন্ন অংশের মধ্যে ঘটে থাকে। এটি একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক ঘটনা যা আলো এবং শব্দ উৎপন্ন করে – যা আমরা বিদ্যুৎ চমক এবং বজ্রধ্বনি হিসেবে জানি।

বজ্রপাতের কারণ:
বজ্রপাতের মূল কারণ হলো মেঘের মধ্যে ধনাত্মক (+) এবং ঋণাত্মক (-) চার্জের পৃথকীকরণ। সাধারণত, ঝড়ো মেঘের মধ্যে জলীয় কণা এবং বরফের কণা থাকে। এই কণাগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের ফলে চার্জের সৃষ্টি হয়। হালকা বরফের কণাগুলো মেঘের উপরের দিকে উঠে যায় এবং ধনাত্মক চার্জ ধারণ করে, অন্যদিকে ভারী জলীয় কণা ও বরফের কণা নিচের দিকে নেমে আসে এবং ঋণাত্মক চার্জ ধারণ করে।
যখন মেঘের নিচের অংশে ঋণাত্মক চার্জ এবং ভূপৃষ্ঠে ধনাত্মক চার্জের পরিমাণ একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় পৌঁছায়, তখন বাতাসের স্বাভাবিক নিরোধক ক্ষমতা ভেঙে যায় এবং বিদ্যুৎ দ্রুত মেঘ থেকে ভূপৃষ্ঠের দিকে প্রবাহিত হয় – এটাই বজ্রপাত
বজ্রপাতের প্রধান কারণ হলো মেঘের মধ্যে ধনাত্মক (+) এবং ঋণাত্মক (-) চার্জের পৃথকীকরণ। সাধারণত, ঝড়ো মেঘের নিচের অংশে ঋণাত্মক চার্জ এবং উপরের অংশে ধনাত্মক চার্জ জমা হয়। যখন এই চার্জের পার্থক্য একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় পৌঁছায়, তখন বাতাস আর বিদ্যুৎের অন্তরক হিসেবে কাজ করতে পারে না এবং একটি শক্তিশালী বিদ্যুৎ প্রবাহ ঘটে, যা আমরা বজ্রপাত হিসেবে দেখি।

বজ্রপাতের প্রকারভেদ:
 * মেঘ থেকে মাটিতে (Cloud-to-ground): এটি সবচেয়ে সাধারণ এবং বিপজ্জনক ধরনের বজ্রপাত। ঋণাত্মক চার্জযুক্ত মেঘ থেকে ধনাত্মক চার্জযুক্ত পৃথিবীর দিকে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়।
 * মেঘ থেকে মেঘে (Intracloud): একই মেঘের বিভিন্ন চার্জযুক্ত অংশের মধ্যে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়।
 * মেঘ থেকে বাতাসে (Cloud-to-air): মেঘের চার্জ এবং মেঘের চারপাশের বাতাসের মধ্যে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়।
 * মাটি থেকে মেঘে (Ground-to-cloud): তুলনামূলকভাবে বিরল, যেখানে উঁচু কাঠামো (যেমন লম্বা ভবন বা পাহাড়) থেকে মেঘের দিকে ধনাত্মক চার্জ প্রবাহিত হয়।
বজ্রপাতের বিপদ:
বজ্রপাত অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে এবং এর ফলে গুরুতর আঘাত, মৃত্যু এবং সম্পত্তির ক্ষতি হতে পারে। বজ্রপাতে আক্রান্ত হলে হৃদরোগ, স্নায়ুর ক্ষতি, পোড়া এবং অন্যান্য মারাত্মক শারীরিক সমস্যা হতে পারে।

বজ্রপাতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক:
 * কারণ: মেঘে মেঘে সংঘর্ষ এবং মেঘ ও ভূপৃষ্ঠের মধ্যে বৈদ্যুতিক চার্জের পার্থক্য।
 * প্রক্রিয়া: মেঘের মধ্যে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক চার্জের বিভাজন, বিভব পার্থক্য বৃদ্ধি এবং অবশেষে বিদ্যুতের স্ফুলিঙ্গ নিঃসরণ।
 * প্রকারভেদ: বজ্রপাত মূলত দুই ধরনের হতে পারে - মেঘ থেকে মেঘে এবং মেঘ থেকে মাটিতে। মেঘ থেকে মাটিতে পড়া বজ্রপাত আমাদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক।
 * ঝুঁকি: বজ্রপাতে সরাসরি আঘাত লাগলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়াও, এর কারণে আগুন লাগা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম নষ্ট হওয়া এবং অন্যান্য দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
 
বজ্রপাত একটি প্রাকৃতিক ঘটনা হলেও, এর ভয়াবহতা সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকা জরুরি। সঠিক সতর্কতা অবলম্বন করে আমরা বজ্রপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে কমাতে পারি।
বজ্রপাত থেকে সুরক্ষার উপায়:
 * ঝড়বৃষ্টির সময় খোলা মাঠ, উঁচু স্থান, গাছপালা এবং জলের কাছাকাছি থাকা উচিত নয়।
 * বিদ্যুৎবাহী জিনিসপত্র (যেমন ল্যান্ডলাইন ফোন, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম) ব্যবহার করা উচিত নয়।
 * জানালা ও দরজা থেকে দূরে থাকুন।
 * গাড়ির ভেতরে থাকলে, ধাতব অংশ স্পর্শ না করে ভেতরেই থাকুন।
 * নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পাকা বাড়ি বা ভবনের ভেতরে যান।
 * বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা স্থাপন করা বজ্রপাত থেকে সুরক্ষার একটি কার্যকর উপায়।
বজ্রপাত একটি প্রাকৃতিক ঘটনা হলেও, কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে এর ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
* বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গায় বা উঁচু স্থানে থাকা উচিত না। বিদ্যুতের খুঁটি, গাছপালা এবং জলের কাছাকাছি থাকা বিপজ্জনক। পাকা বাড়ির ভেতরে আশ্রয় নেওয়া এবং বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকা উচিত। বজ্রনিরোধক যন্ত্র ব্যবহার করে বজ্রপাতের ঝুঁকি কমানো যায়।
 * অবিলম্বে নিরাপদ আশ্রয়ে যান: কোনো পাকা বাড়ি বা ধাতব ছাদযুক্ত গাড়ির ভেতরে আশ্রয় নিন।
 * ঝড় থামার অন্তত ৩০ মিনিট পর আশ্রয় ত্যাগ করুন: শেষবার বজ্রের শব্দ শোনার পরেও বিপদ থাকতে পারে।
 * বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকুন: কর্ডযুক্ত ফোন, কম্পিউটার এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
 * পানির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন: সিঙ্ক, বাথটাব এবং কলের জল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
 * জানালা ও দরজা থেকে দূরে থাকুন: বারান্দা থেকেও দূরে থাকুন।
 * খোলা জায়গায় থাকলে:
   * উঁচু গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটি বা ধাতব জিনিস থেকে দূরে থাকুন।
   * নিচু হয়ে বসুন, তবে মাটিতে শুয়ে পড়বেন না।
   * পুকুর, হ্রদ বা অন্য কোনো জলাশয় থেকে দূরে থাকুন।
বজ্রপাত একটি বিপজ্জনক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সতর্কতা অবলম্বন করে আপনি এবং আপনার পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে পারেন।
বজ্রপাত হলো বায়ুমণ্ডলে বিদ্যুতের দ্রুত নিঃসরণ, যা মেঘ এবং পৃথিবীর পৃষ্ঠের মধ্যে অথবা মেঘের মধ্যেই ঘটে থাকে। এটি একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক ঘটনা যা আলো (বিদ্যুৎ চমক) এবং শব্দ (বজ্র) উৎপন্ন করেবজ্রপাত থেকে সুরক্ষার উপায়:
 * ঝড়বৃষ্টির সময় খোলা মাঠ, উঁচু স্থান, গাছপালা এবং জলের কাছাকাছি থাকা উচিত নয়।
 * বিদ্যুৎবাহী জিনিসপত্র (যেমন ল্যান্ডলাইন ফোন, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম) ব্যবহার করা উচিত নয়।
 * জানালা ও দরজা থেকে দূরে থাকুন।
 * গাড়ির ভেতরে থাকলে, ধাতব অংশ স্পর্শ না করে ভেতরেই থাকুন।
 * নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পাকা বাড়ি বা ভবনের ভেতরে যান।
 * বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা স্থাপন করা বজ্রপাত থেকে সুরক্ষার একটি কার্যকর উপায়।
বজ্রপাত একটি প্রাকৃতিক ঘটনা হলেও, কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে এর ঝুঁকি কমানো সম্ভব।।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

হরি দল ও অক্ষরজ্ঞানহীন দরিদ্র কৃষক হরিপদ কাপালী

"বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল"

ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়ার চিকিৎসায় অগ্রগতি - আত্মহত্যার রোগ