সমুদ্র কেন নীল?

আদিগন্ত বিস্তৃত নীল সমুদ্র মানুষকে সবসময় আকর্ষণ করে। সাধারনত মেষমুক্ত আকাশে সমুদ্রের রঙ নীল দেখায়। এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না, নীল আকাশ সমুদ্রের পানিতে প্রতিবিম্বিত হয় বলেই সাধারণত সমুদ্র নীল। আকাশ নীল রঙ ধারণ করে মূলত 'রেলে স্ক্যাটারিং' (Rayleigh scattering) প্রক্রিয়ায়। এর মানে হলো বাতাসে ভাসমান বিভিন্ন বস্তুকণায় সূর্যরশ্মির নীল রঙটি অন্য রঙের চেয়ে বেশি বিচ্ছুরিত হয়। এ কারণেই আকাশ সাধারণত নীল। আবার সেই একই কারণে সমুদ্রের রঙও নীল দেখায়। সমুদ্র যে সবসময় নীল হবে এমন কোনো কথা নেই। এমনকি একেবারে মেঘমুক্ত নীলাকাশ যখন থাকে তখনও সমুদ্রের রঙ নীল না হয়ে অন্য রঙ, যেমন কিছুটা কালচে বা ছাইরঙ ধারণ করতে পারে। সমুদ্র মাঝে মাঝে রঙ বদলায়, এটা আমাদের অভিজ্ঞতা। এর কারণ হলো সমুদ্রের পানির উপরিতলে ফাইটো প্লান্কটন নামে অতি ক্ষুদ্র, অণুবীক্ষনিক গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ ভেসে বেড়ায়। এদের কারণে সমুদ্রের রঙ বদলঅয়। যদি একসংগে অনেক বেশি উদ্ভিদ সামুদ্রিক খাদ্যচক্রের ভিত্তি এবং সামুদ্রিক প্রতিবেশের প্রাথমিক খাদ্য ও শক্তির উৎস। ফাইটোপ্লান্কটনে থাকে সবুজ ক্লোরোফিল। এরা সূর্যের আলো শুষে নেয়, আবার উদ্ভিদগুলোও সূর্যের আলোর বিচ্ছুরণ ঘটায়। সব মিলিয়ে সমুদ্রের রঙ পরিবর্তন হয়। সাধারণত সমুদ্রের পারি উপরিভাগে প্রচুর ক্ষুদ্র উদ্ভিদ থাকে। পানির নিচে ১০০ মিটার পর্যন্ত এসব উদ্ভিদের সমাবেশ দেখা যায়। তবে এরা সাধারণত পানির ওপরের দিকে থাকতে চায়। কারণ ফটেসিনথিসের মাধ্যমে খাদ্য তৈরির জন্য তাদের সূর্যের আলো দরকার। কখন সমুদ্রের রঙ কী হচ্ছে তা কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে সূক্ষ্ম যন্ত্রের সাহায্যে পর্যবেক্ষণ করা যায়। সমুদ্রের রঙ বিশ্লেষণ করে বোঝা যায় কোন এলাকায় প্রাণের সঞ্চার কতটা বেশি বা কম। এটা জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ স্থলভাগের মতো সমুদ্রেও উদ্ভিদ হলো খাদ্যচক্রের ভিত্তি যার ওপর অন্য সব প্রাণের অস্তিত্ব নির্ভরশীল। তাই সমুদ্রে উদ্ভিদ জাতীয় সম্পদের কার্যক্রম মানুষের এবং পৃথিবীর সামগ্রিক কল্যাণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ